মুহিউদ্দীন ইবনুল আরাবী (রহ.) (৫৬০ হিজরি / ১১৬৫ খ্রিস্টাব্দ – ৬৩৮ হিজরি / ১২৪০ খ্রিস্টাব্দ) ছিলেন ইসলামী আধ্যাত্মিকতার ইতিহাসে এক অনন্য ও শ্রেষ্ঠ সাধক, দার্শনিক ও গবেষক (আরিফ)। তিনি “আল-শাইখ আল-আকবর” বা “মহান আধ্যাত্মিক গুরু” উপাধিতে সমধিক পরিচিত। জন্মগ্রহণ করেন আন্দালুসের (বর্তমান স্পেন) মরকাদা শহরে এবং পরবর্তীতে সিরিয়ার দামেস্কে ইন্তেকাল করেন।
ইবনুল আরাবী ছিলেন এমন এক সুফি সাধক, যিনি আধ্যাত্মিক অভিজ্ঞতা, কুরআন-সুন্নাহর গভীর ব্যাখ্যা এবং বিশ্লেষণাত্মক জ্ঞানের মাধ্যমে তাওহিদের এমন এক উচ্চতম স্তর উন্মোচন করেন, যা তাঁকে আধ্যাত্মিক চেতনার ইতিহাসে অনন্য আসনে অধিষ্ঠিত করে।
তাঁর রচনার সংখ্যা ৮০০-র বেশি, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো –
🔸 ফুতূহাতুল মাক্কিয়া (মক্কার আত্মজ্ঞান)
🔸 ফুসূসুল হিকাম (প্রজ্ঞার মণি)
🔸 রিসালাতুল হুরূফ, তাজাল্লিয়াত, রুহুল কুদস ইত্যাদি।
তিনি বিশ্বাস করতেন যে, বান্দাহ যত বেশি আল্লাহর গুণনামসমূহ (আল-আসমাউল হুসনা) অনুধাবন করবে, তত বেশি তার হৃদয় আল্লাহর নিকটবর্তী হবে। তাঁর শিক্ষায় মারিফাত, তাওহিদ এবং “ওহদাতুল উজুদ” (সত্তার একত্ববাদের ধারণা) গভীরভাবে প্রাধান্য পেয়েছে।
ইবনুল আরাবী (রহ.) ছিলেন এমন এক আধ্যাত্মিক আলোকবর্তিকা, যার প্রজ্ঞা ও মারিফাত আজও বিশ্বব্যাপী লক্ষ লক্ষ হৃদয়ের দিশারী। তাঁর ভাবনা কেবল একটি যুগে সীমাবদ্ধ নয়—বরং চিরকালীন আত্মিক জগতের সন্ধানীদের জন্য এক স্থায়ী আলোর দিগন্ত।